Categories: Entertainment

বিষন্নতা কাটিয়ে আত্মবিশ্বাসী বাঁধন

‘আমি পারব আর আমাকে দিয়েই হবে।’ এই বিশ্বাসেই নতুনভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। গত মাসে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাঁধনের ফ্যাশন, স্টাইল, দেশি উপকরণের পোশাক নজর কেড়েছে সবার। দেশে ফিরে অংশ নিলেন নকশার বিশেষ ফটোশুটে। জানিয়েছেন তাঁর ফিটনেস, তাঁর দিনযাপনের কথা।

একসময় মানসিকভাবে বেশ মুষড়ে পড়েছিলেন। ছিল না ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিও। হাতটা ধরার জন্য পাশে ছিল না কেউ। যখন দেখলেন হারিয়েছেন সবকিছুই, তখন আর কিছুই ফিরে পাওয়ার ছিল না তাঁর। আজমেরী হক বাঁধন, কান চলচ্চিত্র উৎসবের রেড কার্পেটে হেঁটে যাওয়া বাংলাদেশের অভিনেত্রী।

বাঁধন নিজেও মনে করেন পথটা সহজ ছিল না। আবার এই ৩৭ বছর বয়সে এসে ঘুরে দাঁড়ানোও খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। এ জন্য ছিল তাঁর আত্মবিশ্বাস। আর এই আত্মবিশ্বাসের জোরেই বাঁধন এখন আরও সুন্দর, আরও পরিণত।

নকশার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের ফটোশুটের জন্য গত ৩১ জুলাই সময় দিলেন বাঁধন। পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিন, ঢাকায় বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে হলো ছবি তোলা। রাতে মুঠোফোনে বিস্তারিত কথা হয় বাঁধনের সঙ্গে। তাঁর স্টাইল, ফ্যাশন ও দিনযাপন সম্পর্কে বললেন বিস্তারিত।

বাঁধন জানালেন, শাড়ি তাঁর সবচেয়ে প্রিয় পোশাক। তবে বিশেষ কোনো ফ্যাশন হাউস বা ডিজাইনারের প্রতি তাঁর আকর্ষণ নেই। পাশ্চাত্য বা দেশীয়, যে পোশাক তাঁকে মানায় বেশির ভাগ সময় সেটিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এমনও হয়েছে যে রাস্তার ভ্যানগাড়ি থেকে কেনা পোশাকেও নিজের মতো স্টাইল দাঁড় করিয়েছেন বাঁধন। ‘আসলে কী পোশাক পরছি তার চেয়েও বড় কথা হলো পোশাকটি কী তুলে ধরছি। যে পোশাক পরে নিজে আরামবোধ করছি না, সেটি কখনোই আমাকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে পারে না।’ বলছিলেন বাঁধন।

আবার ফিরে আসা

এই যে বাঁধনের ফিরে আসা, তা কি খুব পরিকল্পিত? দ্রুত জবাব বাঁধনের—‘না না। নিজের চেহারা বা ফিটনেস, কোনো ব্যাপারেই সচেতন ছিলাম না আমি।’ তবে মেয়ে সায়রার জন্মের পর থেকেই পারিবারিক নানা কারণে বাঁধনের জীবনে শুরু হয় ‘ডিপ্রেশন’। বাঁধন বলেন, ‘সেই সময় আমি প্রচুর ইটিং–ডিজঅর্ডারে ভুগতাম। মন খারাপ লাগলেই খেতাম বিরিয়ানির মতো তৈলাক্ত সব খাবার। একটা সময় যেন খাবারই আমার মন ভালো করার উপায় হয়ে দাঁড়াল। দিনের পর দিন যখন এমনটা চলতে থাকল, তখন আমি অনেক মুটিয়ে যাই। শারীরিক ফিটনেস বা নিজেকে মেইনটেইন করা—এসব বিষয়ে কোনো মাথাব্যথাই ছিল না আমার। এভাবে একটা সময় আমি মানসিকভাবে হাঁপিয়ে উঠি।’ তখন একজন কাউন্সেলরের শরণাপন্ন হলেন। তিনি বাঁধনকে শরীরচর্চা করার পরামর্শ দেন।

বাঁধন বলে যান—‘তবে শরীরচর্চা ওজন কমাতে নয়, বরং শরীরের গুড হরমোন বা হ্যাপি হরমোনগুলো যেন আমাকে ভালো রাখতে সাহায্য করে, সে জন্য ছিল এই পরামর্শ।’ নিয়মিত এই শরীরচর্চা করে বাঁধন ঝরিয়ে ফেললেন বাড়তি মেদ। মেদ ঝরে যাওয়ার পর তাঁর বিষণ্নতাও কমতে থাকে। পাশাপাশি জাঙ্ক ফুডের বদলে মন দিলেন স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে।

তবে বাঁধনের বিষণ্নতার শুরু আরও আগে থেকে। নিজের ১৯ বছর বয়সে। লাক্স–চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার আগে। নানা কারণে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিষণ্নতা ভর করেছে, কিন্তু বাঁধন সেসব কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন ভালোভাবেই।

ওঁরা পারলে আমি কেন পারব না

ধারাবাহিকভাবে যে ফিটনেস ধরে রাখতে পেরেছিলেন বাঁধন, তা–ও নয়। বিভিন্ন সময় সাংসারিক ও পারিপার্শ্বিক ঝামেলায় হতো না নিয়মিত শরীরচর্চা। বাড়তি ওজন যোগ হতো প্রায়ই। তবে ২০১৭ সালে পুরোপুরি নিজের প্রতি মনোযোগী হন বাঁধন। রুশলান’স স্টুডিওতে শুরু করেন শরীরচর্চা। ‘সেটির স্বত্বাধিকারী রুশলান একদিন জানতে চেয়েছিলেন কেন আমি জিম করতে চাই? উত্তরে বলেছিলাম, “আমি বাঁচতে চাই।” তারপর আর রুশলানকে কিছু বলতে হয়নি। তাঁর মতো করে তিনি আমাকে তৈরি হতে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করেছেন। আরেকটা মজার ব্যাপার, সেই সময় জিমে যাঁরা আসতেন তাঁদের দেখেও অনুপ্রাণিত হতাম। এর মধ্যে অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াও ছিলেন। মনে হতো ওঁরা যদি পারেন তো আমি কেন পারব না।’ এভাবেই ৭৪ কেজি ওজন থেকে ৫৯ কেজি ওজনে নেমে এসেছেন বাঁধন।

আমি পারব আর আমাকে দিয়েই হবে। নিজের ওপর এমন আত্মবিশ্বাস রাখা খুব জরুরি। আর দরকার নিজেকে ভালোবাসা। এভাবেই ভাবেন বাঁধন। নতুনভাবে নিজেকে তৈরি করতে এসবই সাহায্য করেছে।

সহজাত সাজেই সুন্দর

বাঁধন জানালেন, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ব্রাইটটোনের (উজ্জ্বল সাদা) মেকআপ ছিল তাঁর বিশেষ পছন্দ। ‘কারণটা আর কিছু নয়, সেই সময় ফরসা মানেই সুন্দর এই ধারণাটা গেঁথে গিয়েছিল মনে। আসলে সমাজে বা আমার চারপাশে সব সময় এই কথাটা শুনতে শুনতেই বড় হয়েছি আমি। আর তখন নানা জটিলতার ছাপ পড়ত ত্বকেও।’

এবার কান চলচ্চিত্র উৎসবের রেড কার্পেটে বাঁধনের প্রথম দিনের লুকই চমকে দিয়েছিল সবাইকে। সহজাত সাজ আর টেনে বাঁধা চুলে সেই সময়ের বাঁধন আর এই সময়ের বাঁধনের পার্থক্যটা তাই বেশ চোখে পড়ে।

নিজেই সেজেছিলেন কানে

বাঁধন নিজেই জানালেন, এখন তিনি বুঝতে পারেন যে ফরসা মানেই সুন্দর নয়। বরং সাজসজ্জায় নিজেকে নিজের মতো করে তুলে ধরতে পারাই আসল সৌন্দর্য। কানে নিজেই সেজেছিলেন বাঁধন। ‘হাতে সময় থাকত অল্প। এর মধ্যেই সেজে দ্রুত তৈরি হওয়া বেশি কঠিনই ছিল।’

ফ্রান্সের কানে গত জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের আঁ সার্তেঁ রিগা বিভাগে মনোনয়ন পাওয়া রেহানা মরিয়ম নূর ছবির সূত্র ধরেই বাঁধনের অংশগ্রহণ। কারণ, ছবিটির নাম ভূমিকায় যে তিনিই। পরিচালক–প্রযোজকসহ ছবিটির পুরো দলই গিয়েছিল কানে।

জামদানিতেই বাজিমাত

কানের রেড কার্পেটে কী পরবেন, সে ভাবনায় যখন বিচলিত বাঁধন, তখন রেহানা মরিয়ম নূর–এর পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ তাঁকে বলেছিলেন, ‘অন্যরা ব্র্যান্ডকে প্রমোশন করবে আর তুমি তো নিজেই তোমার দেশের ব্র্যান্ড।’ তাই এই উৎসবে দেশি উপকরণে তৈরি পোশাক পরার পরিকল্পনা করেছিলেন বাঁধন। তাঁর মনে হয়েছিল, বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে জামদানি আর শাড়ির কোনো বিকল্প নেই। আর হয়েছেও তা–ই। কান উৎসবে রেহানা মরিয়ম নূর–এর প্রিমিয়ারে ভাইরাল হয়ে যাওয়া আড়ংয়ের জামদানি ও ব্লাউজের গল্প এখন সবারই জানা। বাঁধন কানে আরও পরেছিলেন আজারাজের ডিজাইনার সুমির নকশায় মসলিনের পোশাক আর জুরহেমের স্যুট। প্রতিটি পোশাকেই অনন্য ছিলেন বাঁধন।

তৈরি করছেন নিজেকে

বাঁধন এখন নিজের প্রতি আরও সচেতন। জিম তো আছেই, পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধু পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে নিয়মিত ডায়েট করছেন। নিজের মতো করে তৈরি করছেন নিজেকে। বের করেছেন নিজেকে সুন্দর রাখার কিছু উপায়। এই যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠেই লেবুপানি খান। পাশাপাশি দিনজুড়ে ব্যায়াম আর কাজের ফাঁকে ফাঁকে খেতে থাকেন কালিজিরা, মধু, ইসবগুল, তোকমা ইত্যাদি। না হলে পানিতে ভেজানো অ্যালোভেরা। ভেষজ এসব খাবার ভেতর থেকে সুন্দর রাখতে সহায়তা করে বলে মনে করেন বাঁধন।

একটা বয়সে পৌঁছে গেলে নিজের সৌন্দর্য ধরে রাখতে প্রয়োজন পরিচর্যা। পাশাপাশি নিজের সৌন্দর্যের খুঁতগুলোকে নিখুঁত করাটাও জরুরি। এই যেমন বাঁধন তাঁর হাসিকে সুন্দর করার জন্য দন্ত বিশেষজ্ঞ ডা. খায়রুজ্জামানের সহায়তা নিয়েছেন। যেহেতু নিজেই এ বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, দাঁতের ব্যাপারে অনেক কিছুই তাঁর জানা। নিজের ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা নিচ্ছেন ডা. শারমিনা হকের কাছে। তবে জানালেন, যে কেউ চাইলেই তা করতে পারবেন না। এ জন্য চাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।

সবকিছুর মূলে আত্মবিশ্বাস। বাঁধন যেভাবে বলেন, ‘আমি পারব আর আমাকে দিয়েই হবে।’ বাঁধন ভালোভাবেই পেরেছেন সেটা। নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন বাঁধনহারা উচ্চতায়।

Thanks For Visit Our Website

MD KK REVIEW

View Comments

Recent Posts

The Best Pet Cameras Available In The Market

Are you concerned about the pet activities your pet when you are not present at…

11 months ago

How an Accident Attorney Can Help After an Accident?

What Exactly Is an Accident Attorney? An accident attorney is a specialized legal professional who…

11 months ago

Top 10 Must-Read Books for Book Lovers in 2024

Top 10 Must-Read Books for Book Lovers in 2024 For book enthusiasts, each new year…

11 months ago

Why You Should Try Wearing a Shirt Over a Hoodie?

Introduction to Layering: The Shirt Over a Hoodie Trend Layering is a timeless design approach…

11 months ago

How Search Engine Marketing Can Boost Your Online Visibility

What is Search Engine Marketing? Search engine marketing (SEM) refers to the practice of using paid…

12 months ago

Harmony in the Home: Astrology and Vastu Wisdom for Balanced Living

The Path to Balanced Living: Astrology and Vastu Insights Welcome to the journey towards balanced…

1 year ago