কিভাবে মনের বকবক থামাবেন

কিভাবে মনের বকবক থামাবেন

Tips and Tricks Health

আসুন এখনই একটা পরীক্ষা করে দেখি কিভাবে মনের বকবক থামাবেন। পরবর্তী ৫ সেকেন্ড মনে মনে চুপ থেকে একটাও কথা না বলে চেষ্টা করে দেখুন দুঃখী অনুভব করতে পারেন কি না। কি হলো পারলেন না তো- তো দুঃখী হওয়ার জন্য আপনাকে মনে মনে কিছু বলাটা জরুরী। যেমন ধরুন দুর কিছু ভালো লাগছে না, উফ এ কি মুসকিলে পরলাম ইত্যাদি এমন কিছু না বলে কখনো দুঃখী হওয়া সম্ভব না। এবার তো অনেক কষ্টে নিজের মনকে খুব কষ্টে চুপ করিয়ে রাখলেন। কিন্তু ভাবুন তো এই একই জিনিসটা যদি আপনি যেকোনো সময় যত ক্ষনের জন্য ইচ্ছা করতে পারেন তাহলে তখন কি আপনার জীবনে দুঃখ বলে কিছু তৈরি হওয়ার কোনো জায়গা থাকবে? কিন্তু সেটা করা কিভাবে সম্ভব? সেটাই আজ আমি আপনার সাথে এই পোষ্ট এর মাধ্যমে শেয়ার করবো।

১. আপনার ইগো বা অহংকারই হলো আপনার সবচেয়ে বড় শত্রুঃ

অহংকার বলতে আমরা সাধারনত বুঝি সার্থপরতা করা বা গর্বভোদ করা এই জাতীয় কিছু। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সারাক্ষণ মনের ভিতর এই কথা চলতেই থাকে যেমন টেপ রের্কডারে চলে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমরা সারাদিন এর কথা মতোই কাজ করে থাকি। চুপচাপ হয়তো একটু বসে আছেন হঠাৎ ই মনের ভিতর থেকে আওয়াজ আসলো কি বসে বসে বোর হচ্ছি একটু ফেসবুকে ডুকে দেখি আর সাথে সাথে ফোনটা হাতে তুলে নিলেন অথবা অফিস থেকে ফিরে আপনি ওতটাও ক্লান্ত না কিন্তু মনের ভিতর থেকে আওয়াজ আসলো যে আজ খুব ক্লান্ত লাগছে আজ আর জিমে যাবো না আজকে ঐ সিরিয়ালটার মহা পর্ব টাও তো দেখতে হবে। ফলে আপনি টিবি চালিয়ে বসে পড়লেন। আমি যদি বলি এখনই মোবাইল টা নিয়ে ফেসবুক টা একটু ঘুরে আসুন আমার কথাটা শুনা মাত্রই আপনি কথাটা বিচার করতে শুরু করে দিবেন। যেমন- আমি কেনো বলছি? আমার কি এর পিছনে কোনো মতলব আছে? আমার কি তার কথা মতো কাজ করা ঠিক হবে? ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এই একই কথাটা যদি আপনার মন বলে তখন আপনি কোনো বিচার না করেই কাজ টা করতে শুরু করে দিবেন।

তো প্রধান সমস্যাটা হলো আপনি নিজের ইগোর সাথে নিজেকে পরিচয় করিয়ে নিয়েছেন। অর্থাৎ আপনি মনে করেন আপনার ইগোই হলো আপনি। ফলে আপনার ইগো আপনাকে যা করতে বলে আপনি তার কোনো বিচার না করেই তা মেনে নেন। কারন আপনি মনে করেন আপনি আপনার নিজের মত অনুযায়ী কাজ করছেন। যে সম্পূর্ন একটা মায়ার জাল। আপনি নিজেই ভেবে দেখুন না যদি আপনি সত্যিই আপনি আপনার ইগো অর্থাৎ আপনি আপনার মনের ভিতরের আওয়াজটা হতেন তাহলে গভীর ঘুমের সময় সেই আওয়াজটার কোনো অস্তিত্য থাকে না তখন আপনি কি করে উপস্থিত থাকতেন। ঘুম থেকে উঠার পর আপনি কিভাবে বুঝতে পারেন একটু আগে আপনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্য ছিলেন। সেই ভয়েজ টা মরে যাওয়ার সাথে সাথে আপনারও তো মরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই পোষ্টটা শুরু হওয়ার সময়ও ৫ সেকেন্ডের জন্য সেই ভয়েজ টা মরে গিয়েছিলো। কিন্তু আপনি তো বেচে ছিলেন। তাই সবার আগে আপনাকে এই মায়ার জাল থেকে নিজেকে বের করে আনতে হবে। তা না হলে যদি আপনি এই আদপাগলা গর্দব ইগোর কথা মতো চলতে থাকেন তাহলে আপনার বিপদ নিশ্চিত।

২. আপনার অহংকার কখনো সন্তুষ্ট হয় নাঃ

আজকে যদি আপনার প্রোফাইল পিকচারে ৫০ টা লাইক আসে তবে পরবর্তী প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করার পর আপনার সেই ছবিতে আপনার ইগোর ৬০ টা লাইক চাই। এবার ধরুন পর দিন যদি আপনি ৬০ টা লাইক পেয়েও যান তাতে কি আপনার ইগো চিরকালের জন্য সন্তুষ্ট হয়ে যায়? নাকি পরের পিকচারে ৭০ টা লাইক চাই। কিন্তু কোনো কারনে যদি সেই দিন ৭০ টার বদলে কমে ৪০-৪৫ টা লাইক পড়ে তাহলে ব্যস উল্টো পাল্টা বকবক শুরু। আমি মনে হয় আগের থেকে দেখতে খারাপ হয়ে যাচ্ছি, ধুর.. আমাকে তো কেউ পছন্দই করে না ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই ইগো যেটা চায় আর সেটা যদি পায় তাহলে সে কয়েক মূহূর্ত এর জন্য সে খুশি হয় আর কিছুক্ষন পর তার থেকেও বড় একটা নতুন গোল তৈরি করে তার জন্য মনে মনে বকবক শুরু করে দেয়। অর্থাৎ আপনি যখন নিজের সাথে ইগোকে যাচাই করে বেচে থাকার পথকে বেছে নেন তখন আপনার জীবনে খুশি, আনন্দ এগুলো ডুমুরের ফুলের মতো ক্ষনিকের বিরল ঘটনা হয়ে দাড়ায়। আর ছটফটানি, অশান্তি, দুঃখ ইত্যাদি গুলো প্রতি মুহূর্তে সঙ্গী হয়ে দাড়ায়।

৩. আত্ন-সচেতনতাই হলো অহংকারের মায়াজাল থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায়ঃ

বাস স্টপে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছেন হঠাৎ ই আপনার ইগো বলে উঠলো না আজ সারা দিন প্রচুর দকল গেলো এই ফাকে একটা ছিগারেট খেয়ে নিই। যদি আপনি আত্ন-সচেতন না হন অর্থাৎ যদি আপনি আপনার মাথার ভেতরের ভয়েজ টাকেই নিজের ভয়েক বলে মেনে নেন তাহলে আপনি কখনো বিচারও করবেন না যে আপনার ছিগারেট টা ধরানো উচিৎ হবে কি না। কিন্তু আপনি যদি আত্ন-সচেতন হন তাহলে ছিগারেট ফুকার জন্য আপনি যে ছটফট করছেন তা আপনি বুজতে পারবেন এবং কাজটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে কি না তা বিচার করতে পারবেন। আর তার পরও যদি আপনি হেরে গিয়ে অবশেষে সেই সিগারেট তুলেও নেন তবে আপনি এটা জানবেন এটা করে আপনি আপনার নিজের ক্ষতি করলেন। কিন্তু আপনি যদি আত্ন-সচেতন না হোন তবে আপনি সিগারেট টা সম্পূর্ন ধুমপান করার পর জানবেনও না যে এই মাত্র আপনি আপনার ক্ষতি করলেন। এটাই আত্ন-সচেতন থাকার আর না থাকার মধ্যে সবচেয়ে বড় তফাৎ। কারন সচেতন হয়ে কখনই আপনি দীর্ঘ দিন ধরে নিজের ক্ষতি করতে পারবেন না। এক সময় ওই ছটফটানিকে আপনার সচেতনতা পার করেই যাবে। তখন আর এই অহংকারের মায়া আপনার উপর কর্ততৃত্ব ফলাতে পারবে না। মজার বিষয় হলো যখন আপনি ইগোর মায়ার কবলে থাকেন সেই সময় সম্পূর্ণ সিগারেট টা ধুমপান করার পরও কখনও আপনার এটা মনে হয় না যে আপনি এই মাত্র নিজের ক্ষতি করলেন। তাই ইগো কখনোই আপনাকে বর্তমান সময়ে থাকতে দেয় না। অতীত বা ভবিষৎ নিজের সব সময় বকে চলার মাধ্যমে আপনার ইগো চালাকি করে আপনার সচেতনতাকে বর্তমান থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে অতীত বা ভবিষতে আটকে দেয়। যেমন ধরুন-

সিগারেট খেতে খেতে আপনি এতোটাই মগ্ন হয়ে উঠেন যে সারাদিন আপনার সাথে কি কি খারাপ হয়েছে তা নিয়েই ভাবতে থাকেন। কিন্তু এখন যে আপনি আপনার নিজের ক্ষতি করছেন সে দিকে আপনার কোনো ধ্যান বা ধারনাই থাকে না। সম্পূর্ণ অসচেতন ভাবে ধুমপান করে চলেন।

তাই আপনি আপনার আত্ন-সচেতনাকে বা ধ্যানকে যত বেশি সময় বর্তমান সময়ে ধরে রাখতে পারবেন তত বেশি আপনার ইগো অর্থাৎ আপনার অহংকার দুর্বল হয়ে পড়বে। আর ওর মায়াজাল থেকে আপনি বেরিয়ে আসতে পারবেন। আর এভাবেই নিজের মনের বকবক থামাতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *