নোরবের্তো মেন্দেজের নাম তো শুনেছেন? সেই যে চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকে ‘তুশো’ তকমা পাওয়া কিংবদন্তি।
তিনি একবার বলেছিলেন, ‘তিন রকম ভালোবাসা ধরা দিয়েছে আমার জীবনে—উরাকান (ক্লাব) আমার গার্লফ্রেন্ড, রেসিং (ক্লাব) আমার স্ত্রী ও আর্জেন্টিনা আমার প্যাশন।
লিওনেল মেসিকে জিজ্ঞাসা না করেও তাঁকে ঠিক একই ছাঁচে ফেলা যায়। মেসির জীবনে দুই রকম ভালোবাসা—বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনা!
আন্তর্জাতিক ময়দানে টিকে থাকা সব টুর্নামেন্টের মধ্যে প্রাচীনতম এই কোপা আমেরিকায় এক দিক বিচারে মেসি হাঁটছেন মেন্দেজের পথে। কোপার ১০৫ বছরের ইতিহাসে মেন্দেজ সর্বোচ্চ গোলদাতা (১৭)। মেসির গোলসংখ্যা ১৩। চার গোলের এই ব্যবধান তাঁর ৩৪ বছর বয়স বিচারে অনেকে দুর্গম মনে করতে পারেন।
কিন্তু আর্জেন্টিনার জার্সির প্রতি মেসির যে ভালোবাসা, কে জানে কোপার পরের সংস্করণেও হয়তো তাঁকে দেখা যেতে পারে! তখন কিন্তু মেন্দেজের রেকর্ড ঝুঁকিতে পড়তেও পারে।
তবে যে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া না করে বর্তমান নিয়ে ভাবাই ভালো। বর্তমান ফুটবলারদের মধ্যে কোপায় গোলসংখ্যায় মেন্দেজ ও মেসির চেয়ে এগিয়ে পেরুর পাওলো গেরেরো ও চিলির এদুয়ার্দো ভার্গাস। দুজনের গোলসংখ্যাই সমান, ১৪।
কিন্তু মেসির সুবিধা অন্য জায়গায়। কোপা থেকে চিলি দল ইতিমধ্যেই বাড়ি ফিরেছে আর সেমিফাইনালে ওঠা পেরুর স্কোয়াডে ডাক পাননি ৩৭ বছর বয়সী স্ট্রাইকার গেরেরো।
এদিকে মেসির সামনে এবার কোপার সেমিফাইনালে কলম্বিয়া-বাধাটা টপকে যেতে পারলে আছে ফাইনালও। অর্থাৎ এক ম্যাচ নিশ্চিত আর সম্ভাব্যতা যাচাই করলে দুটি ম্যাচ পাচ্ছেন মেসি।
আর্জেন্টিনার ২৮ বছরের শিরোপা–খরা ঘোচাতে আপাতত সেমিফাইনাল এবং জিতলে ফাইনালটা গোটা টুর্নামেন্টেই সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ ম্যাচ তাদের জন্য। মেসিরও এসব ম্যাচে নিজেকে নিংড়ে দিয়ে খেলার কথা। তাই গোল যে তিনি পাবেন না, এ কথায় বাজি ধরার লোকের সংখ্যা কম। এর পেছনে যুক্তি মেসির ফর্ম।
এবার কোপায় তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতা (৪), গোল বানিয়ে দেওয়াতেও মেসির ধারেকাছে কেউ নেই। ৪টি গোল বানিয়ে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন তারকা। মূলত মেসির এই ফর্মে চেপেই কোপার সেমিফাইনালে উঠে এসেছে আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনার সমর্থকদের প্রত্যাশা, এবার দেশকে কোপা জিতিয়ে মেসিও হবেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। শিরোপাজয়ের সম্ভাবনা তুলে রাখা যাক সময়ের ঝুলিতে। তবে সর্বোচ্চ গোলদাতার দৌড়ে মেসি কিন্তু এখনই বেশ এগিয়ে।
সেমির লাইনআপে টিকে থাকা দলগুলোর মধ্যে ২টি করে গোল করে মেসির এক ধাপ পেছনে নেইমার (ব্রাজিল), লাওতারো মার্তিনেজ (আর্জেন্টিনা), পাপু গোমেজ (আর্জেন্টিনা), আন্দ্রে কারিল্লো (পেরু) ও জিয়ানলুকা লাপাদুলা (পেরু)। গোল বানানোয়ও মেসির এক ধাপ পেছনে থাকা নেইমারের ‘অ্যাসিস্ট’ ২টি।
বড় টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে গোল করা ও করানো মিলিয়ে সর্বোচ্চ অবদানের রেকর্ডেও কিছুদিন আগে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে পেছনে ফেলেন মেসি। এ তালিকায় তাঁর অবদান ২০ গোলে, যেখানে রোনালদোর ১৭টিতে। কিন্তু এসব সংখ্যা নিশ্চয়ই মেসিকে সেভাবে প্রভাবিত করে না। দেশকে শিরোপা জেতানো যাঁর লক্ষ্য এবং সেই পথে যিনি এগিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাঁর পায়ে এসব সংখ্যা তো আপনাই লুটিয়ে পড়ে!
Winning All That Matters for USMNT & Mexico in Gold Cup final
Thanks For Visit Our Website