'নয়া জামাই' নিয়ে নয়া চাঞ্চল্য

‘নয়া জামাই’ নিয়ে নয়া চাঞ্চল্য

Entertainment

মানুষের ঠোঁটে আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে ফিরছে গত শতকের ষাটের দশকের ‘আইলো রে নয়া জামাই’ গানটি। একসময় এ গান শোনা যেত বিয়েবাড়ি ও আঞ্চলিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে। বহুকাল পেরিয়ে সেটি এখন ফেসবুক ইউটিউবে এসেছে ডান্স কাভার হয়ে। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে নয়া চাঞ্চল্য। যে যাঁর আয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী গানটির সঙ্গে নাচ করে ভিডিও শেয়ার করছেন অনলাইনে।

হঠাৎ করেই গানটিকে তরুণদের নজরে আনেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সংগীতায়োজক, শিল্পী মুজাহিদুর আবদুল্লাহের মুজা। গানটিতে কণ্ঠ দেন তোসিবা বেগম ও মুজা। নতুন ধরনের সংগীতায়োজনে গানটি বেশ প্রশংসা কুড়ায়। তবে বিতর্ক ওঠে গীতিকবির নাম নিয়ে। মুজার ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেলে শুরুতে গানটির গীতিকবির নাম লেখা হয় হাসন রাজা। যদিও পরে সেটি সংশোধন করে গীতিকবি হিসেবে লেখা হয় দিব্যময়ী দাশের নাম। তবে এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে নানা পর্যায়ে। গীতিকার হিসেবে অনেকের নাম এলেও কোনো গবেষকই সেই কবির নাম নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে দিব্যময়ী দাশকেই গানটির মূল কবি হিসেবে পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন সিলেট অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করছেন শাকুর মজিদ। ফেসবুকের এক পোস্টে এই লেখক, নাট্যকার ও গবেষক লিখেছেন, ‘লোকগানের লেখকেরা নামের কাঙাল নন। তাদের গানটা যে অপর পছন্দ করছেন, সেটাই বিষয়।’

‘অসময়ে ধরলাম পাড়ি’ অ্যালবামে পণ্ডিত রাম কানাই দাশ গেয়েছিলেন ‘আইলারে নুয়া জামাই’ গানটি। ২০০৪ সালে সেটি প্রকাশিত হয় বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে।

সেই সূত্রে জানা যায়, রামকানাই দাশের গাওয়া এ গানের কথা লিখেছিলেন তাঁর মা দিব্যময়ী দাশ। জানা যায়, ১৯৭২-৭৩ সালে দিব্যময়ীর অনুমতি সাপেক্ষে শিল্পী ইয়ারুন নেসা গানটি গেয়েছিলেন সিলেট বেতারে। সে সময় বেশ কিছু শব্দ বদলে গাইতে হয়েছিল গানটি। গানের কথাগুলো ছিল এমন—’আইলো রে নয়া জামাই আসমানেরো তেরা/ বিছানা বিছাইয়া দেও শাইল ধানের নেরা/ জামাই বও জামাই বও।’ গানের শেষ অংশে ছিল—’কুঞ্জেরো ভিতরে জামাই বইছে গো সাজিয়া/ পাড়ার লোকে দেখতে আইছে দিব্যময়ীর বিয়া/ জামাই বও জামাই বও।’

সিলেট অঞ্চলের বেশ কয়েকজন প্রবীণ শিল্পীদের মতে, গানটির রচয়িতা দিব্যময়ী দাশ নন। এটা বহুকালের প্রচলিত বিয়ের গীত।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নয়া সংগীতায়োজনের ‘নয়া জামাই (আইলারে নয়া দামান)’ গানটির সঙ্গে নাচ করেছেন অনেকেই। বাড়ির ছাদে করা দুটি ভিডিও ও ঢাকা মেডিকেলের তিন চিকিৎসকের নাচের ভিডিওগুলো সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ ছাড়া কাঁচা হাতের তৈরি নানা রকম ভিডিও ছড়িয়ে রয়েছে অনলাইনে। বিষয়টিকে একই সঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক মনে করছেন সংগীত ও লোকসংস্কৃতি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। লোকসংস্কৃতি গবেষক, লেখক সাইমন জাকারিয়া বলেন, ‘সংগীতপ্রযুক্তি জানা তরুণদের মাধ্যমে গানগুলো আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে, এটা ইতিবাচক। তবে এর নেতিবাচক দিকও রয়েছে। গ্রামে যাঁরা গানটি অতীতে গেয়েছেন বা ভবিষ্যতে যাঁরা গাইবেন, তাঁরা স্বভাবতই চাইবেন এই জনপ্রিয় ধারাটি অনুসরণ করতে। এতে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *